728x90 AdSpace

  • Latest News

    শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০১৭

    মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফাযায়িল-ফযীলত ও সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক

    মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণ উনাদেরকে মুহব্বত ও অনুসরণ-অনুকরণ করার কথা খোদ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে, উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ও উলিল আমরগণ উনাদেরকে অনুসরণ কর।’ আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, ‘তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণ উনাদেরকে মুহব্বত করো। কারণ, উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মকবূল। আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করো না। কেননা উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত।’ সুবহানাল্লাহ!
    মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরই নির্দেশ মুবারক হচ্ছে, উলীল-আমর তথা মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণ উনাদেরকে মুহব্বত ও অনুসরণ-অনুকরণ করা। আর আফযালুল আউলিয়া, কাইয়্যুমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হলেন একজন খাছ উলীল আমর বা মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী তথা সত্যিকার নায়িবে রসূল।
    কাইয়্যুমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এমনই একজন উলিল আমর বা নায়িবে রসূল উনার সম্পর্কে স্বয়ং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। যেমন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হিজরী একাদশ শতাব্দীর আরম্ভকালে মহান আল্লাহ পাক এমন এক ব্যক্তি উনাকে প্রেরণ করবেন, যিনি একটি বৃহৎ নূর। উনার নাম মুবারক হবে আমার নাম মুবারক উনার অনুরূপ। দুই অত্যাচারী বাদশাহর রাজত্বকালের মাঝে তিনি আবির্ভূত হবেন এবং উনার সুপারিশে অগণিত মানুষ বেহেশতে প্রবেশ করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
    পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি আগমন করবেন যাঁকে ‘ছিলাহ’ উপাধি দেয়া হবে। উনার সুপারিশের কারণে অগণিত লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ! সুলতানুল আরিফীন হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘জামউল জাওয়াম’ ও ‘জামিউদ্ দুরার’ কিতাবে উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফ দু’খানা উল্লেখ করেছেন।
    ‘সম্রাট আকবর’ সৃষ্ট ফিতনার চরম সময়ে ৯৭১ হিজরীর ১৪ই শাওয়াল (ঈসায়ী ১৫৬৩ সাল) ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন পাঞ্জাব প্রদেশের পাতিয়ালার পবিত্র সিরহিন্দ শরীফ-এ। মাত্র ছয় বছর বয়স মুবারকে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ হিফয করেছিলেন। অতঃপর কানপুরস্থ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে জগৎবরেণ্য আলিমগণ উনাদের নিকট তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র তাফসীর শরীফ, ফিক্বাহ, সাহিত্য, কাব্য, ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন, বিজ্ঞানসহ পবিত্র ইসলামী ইলমের সকল শাখায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। কামালতের পরিপূর্ণ ধাপে উত্তরণের জন্য তিনি ওলীকুল শিরোমণি হযরত খাজা বাকীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে বাইয়াত হন।
    হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত খাজা বাক্বীবিল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে মুরীদ হওয়ার পূর্বেই উনার বুযূর্গ পিতা হযরত শায়েখ আব্দুল আহাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে ১৭টি ছিলছিলায় খিলাফত হাছিল করেন। এ সমুদয় তরীক্বা বিশ্লেষণ ও অনুশীলনের মাধ্যমে উনার ভিতর ‘মুজাদ্দিদসুলভ’ কামালতের এক মানসভূমি প্রকাশ পায়। এর সাথে যুক্ত হয় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে পাওয়া খাছ কামালতসমূহ। আর এতে করেই মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত দ্বিতীয় সহস্র হিজরী সনের ‘মুজাদ্দিদ’ হিসেবে উনার মধ্যে সমাবেশ ঘটে ইমামত ও কাইয়্যুমিয়াত উনার। মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত নিয়ামত ও যোগ্যতা বলে তিনি নক্শবন্দিয়া তরীক্বা উনার সংস্কার সাধন করেন এবং নুবুওওয়াতে কামালতের সাথে এ তরীক্বা শরীফ উনার সেতুবন্ধন রচনা করেন। এভাবে পৃথিবীতে সকল কামালতের সংযোগ বিশিষ্ট ‘মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বা’ উনার প্রকাশ ঘটে। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পরে এই তরীক্বা অথবা অন্য কোনো সিলসিলায় এমন প্রাতিষ্ঠানিক অগ্রগতির কথা বাহ্যিকভাবে জানা যায়নি।
    আকবর নিদারুণ মর্মপীড়া ও দৈহিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়। অবশেষে ১৫৫৬ থেকে ১৬০৫ ঈসায়ী সন পর্যন্ত সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের রাজত্বের অবসানে ১৬০৫ ঈসায়ী সনে আকবরের মৃত্যু হয়। কিন্তু সে তার আদর্শ সঞ্চারিত করে যায় বাদশাহ জাহাঙ্গীরের মন ও মননে। সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর তার আটত্রিশ বছরের পুত্র জাহাঙ্গীর মোঘল সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। এক পর্যায়ে সম্রাজ্ঞী নূরজাহান, আসিফ খান এবং অন্যান্য রাজন্যবর্গ ও আমলাদের সুপারিশে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জাহাঙ্গীর কারাবন্দি করেন। এ কারাবাসকে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি- নির্জনতায় উনার মর্যাদা ও মর্তবা উত্তরণের অনুকূল ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করেছেন। সুদীর্ঘ দু’বছর কারাবাসকালে উনি নিয়ামতপূর্ণ ছোহবত দান করে অনেক কারাবন্দিকে তিনি হিদায়েতের পথে এনেছেন। এরই মাঝে উনার অসংখ্য মুরীদ ও খলীফার মধ্যে খিলাফত প্রতিষ্ঠার তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। সম্রাট জাহাঙ্গীর ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উনাকে গোয়ালিয়ার দুর্গ থেকে মুক্তি দিয়ে রাজ দরবারের অন্তঃপুরে নজরবন্দি করে রাখেন। অবশেষে বিজয় সূচিত হয় তখন, যখন সম্রাট জাহাঙ্গীর হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে উনার কাছে মুরীদ হন।
    সম্রাট আকবরের সময়ে যে সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে বাস্তবায়িত হয়। আন্দোলনের তীব্রতার মুখে মানসিক দিক দিয়ে পর্যুদস্ত জাহাঙ্গীর হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কারাবাস থেকে মুক্তি দিয়ে উনার সাক্ষাৎ লাভের অনুমতি প্রার্থনা করেন। সাক্ষাৎ দানের পূর্বে তিনি যেসব শর্ত আরোপ করেছিলেন তা হলো- (১) রাজ দরবারে তা’যীমী সিজদা প্রথা রহিতকরণ (২) সকল মসজিদের পুনঃনির্মাণ (৩) জিজিয়া কর পুনঃপ্রবর্তন (৪) পবিত্র ইসলামী শাসন ব্যবস্থা চালু করার জন্য কাজী ও মুফতী নিয়োগ (৫) সকল বিদয়াত কার্যকলাপ নিষিদ্ধকরণ; (৬) গরু যবেহ করার উপর নিষেধাজ্ঞা রহিতকরণ; (৭) সংস্কার আন্দোলনে সকল কারারুদ্ধ ব্যক্তিকে মুক্তিদান।
    সম্রাট জাহাঙ্গীর সকল শর্তই মেনে নিয়ে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ হন এবং উনার উপদেশমতো সাম্রাজ্য পরিচালনা করতে থাকেন। উনার উপদেশেই জাহাঙ্গীর শাসননীতিতে পবিত্র ইসলামী আইন সংযোজন করেন। জাহাঙ্গীর শেষ জীবনে প্রায়ই বলতেন, “আখিরাতে নাজাত পেতে পারি, এমন কোনো কাজ (আমল) আমি করিনি। তবে আমার কাছে একটি সনদ আছে, আখিরাতে আমি তা মহান আল্লাহ পাক উনার সমীপে পেশ করবো। সে সনদ এই যে, একদিন হযরত শায়েখ আহমদ ফারুক্বী সিরহিন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাকে বলেছেন- যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে সম্মানিত জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি দান করেন, তবে আপনাকে ছেড়ে যাবো না।” সুবহানাল্লাহ!
    হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজ জীবনে পবিত্র সুন্নত উনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ঘটিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করেন। মানুষের মাঝে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত অনুসরণের স্পৃহা জাগিয়ে তুলে তিনি অবলুপ্ত সকল সুন্নত মুবারক যিন্দা করেন। এ জন্য উনাকে বলা হয় ‘মুহইউস সুন্নাহ’।
    পবিত্র সুন্নত উনার পরিপূর্ণ অনুসারী এবং মহান আল্লাহ পাক উনার যমীনে সুন্নত জিন্দাকারী হাজার বছরের মুজাদ্দিদ- হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি উনার বড় সাধ, উনার কর্মময় জীবনাবসানের সর্বশেষ কাজটিও যেন পবিত্র সুন্নত উনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। তিনি আপনজন, খলীফা ও মুরীদগণকে ডেকে বললেন, “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তেষট্টি বছর বয়স মুবারকে নশ্বর পৃথিবী থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার দীদারে প্রত্যাবর্তন করেন।” অবশেষে সময় ঘনিয়ে এলো। তেষট্টি বছর বয়স মুবারকে পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করে আমল ও ক্ষমতা বহির্ভূত পবিত্র সুন্নত অনুসরণের উনার এই অন্তিম বাসনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পূর্ণতা দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! হিজরী ১০৩৪ (ইংরেজি ১৬২৪ সাল) পবিত্র ২৮শে ছফর শরীফ তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন) 
    প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- আফযালুল আউলিয়া, কাইয়্যুমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে জানা, উনাকে মুহব্বত ও অনুসরণ-অনুকরণ করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি মুবারক হাছিল করা।
    • Blogger Comments
    • Facebook Comments

    0 মন্তব্য(গুলি):

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    Item Reviewed: মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফাযায়িল-ফযীলত ও সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক Rating: 5 Reviewed By: Unknown
    Scroll to Top